নাসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মঙ্গল অনুসন্ধানকারী মহাকাশযান মাভেন (MAVEN)–এর সঙ্গে হঠাৎ করেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রায় ১১ বছর ধরে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ও আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করা এই মহাকাশযানটি ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে গ্রহটির আড়ালে যাওয়ার পর আর সাড়া দেয়নি।
নাসা জানিয়েছে, গ্রহটির পেছনে যাওয়ার আগে মাভেন একেবারে স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল। কিন্তু আড়াল থেকে বের হয়ে আসার পরও পৃথিবীর যোগাযোগ কেন্দ্র ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক (Deep Space Network) কোনো সিগন্যাল ধরতে পারেনি। এ কারণে মহাকাশবিজ্ঞানীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নাসা বলেছে, তারা এখন দ্রুত সমস্যার কারণ খুঁজে দেখছে এবং যোগাযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
২০১৩ সালে উৎক্ষেপণ করা মাভেন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মঙ্গলের কক্ষপথে কাজ শুরু করে। এর মূল কাজ ছিল মঙ্গলের উপরের বায়ুমণ্ডল কীভাবে সময়ের সঙ্গে হালকা হয়ে গেছে তা খুঁজে বের করা। গবেষণায় দেখা গেছে—সূর্যের তীব্র রশ্মি ও সৌর বাতাস (solar wind: সূর্য থেকে বের হওয়া আয়নিত কণা) মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল কমিয়ে দিয়েছে। একসময় গ্রহটি উষ্ণ ও পানি–সমৃদ্ধ ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা ঠান্ডা ও শুষ্ক গ্রহে পরিণত হয়।
মাভেন শুধু গবেষণাই করেনি, নাসার মঙ্গল রোভারগুলো—কিউরিওসিটি এবং পারসিভিয়ারেন্স—এর জন্য বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করত।
মাভেনের তথ্য মঙ্গলের অনেক রহস্য উন্মোচনে বড় ভূমিকা রাখে—প্রবল ধূলিঝড়ে পানি কীভাবে উপরের স্তরে উঠে যায়, সৌর বাতাসে কীভাবে পানি ও গ্যাস হারায়, মঙ্গলের অদৃশ্য চৌম্বক লেজ (magnetic tail) কেমন এবং বিরল প্রোটন অরোরা (proton aurora: প্রোটনের সংঘর্ষে তৈরি আলোর ছটা) দেখা যায় কীভাবে—এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতো মাভেন।
এদিকে নাসার আরও দুই মহাকাশযান—মার্স রিকনাইসেন্স অরবিটার (MRO) এবং মার্স ওডিসি—এখনও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে এবং মঙ্গলের তথ্য পাঠাচ্ছে। নাসা জানিয়েছে, মাভেনের যোগাযোগ ফিরে এলে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল