বাংলাদেশে ভোটের মৌসুম শুরু হলেই জোট গঠনের মৌসুমও শুরু হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নতুন দল এবং নবগঠিত শক্তিগুলো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নির্বাচন সামনে রেখে দলগুলো সাধারণত জোটে মিলিত হয়ে রাজনৈতিক হিসাব কষে নতুন সমীকরণ তৈরি করে। তবে এবার বাস্তবতা ছিল অনেকটাই ভিন্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশ যে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গেছে, তা রাজনৈতিক মহলে প্রধান আলাপের বিষয় হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু দেখা যাচ্ছে একেবারে উল্টো চিত্র। নতুন বা পুরোনো কোনো দলই তাদের জোট গঠনের এজেন্ডায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বা জীবনযাত্রার সংকটকে অগ্রাধিকার দেয়নি; বরং আদর্শিক পরিচয়, সাংগঠনিক বিস্তার কিংবা পদ্ধতিগত সংস্কারের মতো তাত্ত্বিক বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জুলাইয়ের পর যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল এবং যে স্বচ্ছ অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তা জোট গঠন নিয়ে দলগুলোর আলোচনায় প্রতিফলিত হয়নি। মানুষ আশা করেছিল যে রাজনৈতিক দলগুলো শুধু রাষ্ট্র পুনর্গঠন নয়, তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, ভোটের প্রস্তুতি ও জোট গঠনের ব্যস্ততায় জনগণের এই প্রত্যাশা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সংকট, কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয়, মুদ্রাস্ফীতি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি, শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, অর্থনীতির গতি কমে যাওয়া, বৈদেশিক বিনিয়োগে স্থবিরতা সব মিলিয়ে দেশের সামনে যে বাস্তব সংকট দাঁড়িয়ে আছে, তা কোনো জোটের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। যেসব আদর্শিক অঙ্গীকার বা আসন সমঝোতা এসব জোটের চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে, তা কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।