ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ বা জোর করে লোক পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক নতুন বিবর্তন আমরা দেখছি। গত মে মাসে বিএসএফের হাতে ছয় জন বাংলাদেশি নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, অসংখ্য ভারতীয় নাগরিককে বিদেশি পরিচয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে।’
শুক্রবার (৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবাসন চুক্তি না মেনে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের পরিপন্থী।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত কখনোই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে চায় না। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা পরিকল্পিতভাবে পুশ-ইনসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা, সীমান্ত হত্যা ও জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার—সবকিছুই এরই অংশ।’
রিজভীর মতে, ‘ভারত বাংলাদেশকে সমমর্যাদার চোখে নয়, বরং আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দেখে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের কোনও শ্রদ্ধা নেই। এক সুদূরপ্রসারী মাস্টার প্লানের অংশ হিসেবেই এভাবে ভারতীয় নাগরিকদের ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হচ্ছে।’
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সরকার কেন এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না? সরকারের মধ্যে নেই কোনো উদ্যম, নিষ্ঠা বা নেতৃত্বের মৌলিকতা। এ নিয়ে জনমনে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না পাওয়ার বিষয়েও সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘একটি সরকারের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। কিন্তু অনেক কারখানায় এখনও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আনন্দকে সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার কথা বলা হলেও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবীরা সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কায়ক্লেশে দিনযাপন করা এই মানুষগুলো ন্যায্য পাওনা না পেয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঈদ পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন।’
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এটা জনমুখী সরকারের অন্যতম কাজ হওয়া উচিত ছিল। অথচ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার ও উদাসীন ভূমিকা নিচ্ছে।’
তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস মেটানোর জোর দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।