ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে এখন আর আলাদা গাইডবুক বা ভ্রমণ এজেন্সির দরকার পড়ে না। স্মার্টফোনে থাকা ‘গুগল ম্যাপস’ বা ‘অ্যাপল ম্যাপস’-ই যথেষ্ট।
গন্তব্য খোঁজা, পছন্দের জায়গা সংরক্ষণ, রিভিউ দেখা, রেস্টুরেন্ট বুকিং করা থেকে শুরু করে জাতীয় উদ্যান ঘুরে দেখার রুট তৈরি সবই এখন ফোনের স্ক্রিনে সম্ভব বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ফোন দিয়েই পুরো ভ্রমণের ছক কষে ফেলা যায়।
গন্তব্য চিনে নিন আগে
অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস-এর জন্য গুগল ম্যাপস এবং আইওএস-এর জন্য অ্যাপল ম্যাপস-এ যে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা গন্তব্য খুঁজলে ‘প্লেস কার্ড’ নামে একটি তথ্যপত্র ভেসে ওঠে, যেখানে ঠিকানা, সময়সূচি, রিভিউসহ আরও অনেক কিছু থাকে।
গুগল ম্যাপসের ‘এক্সপ্লোর’ ট্যাবে ট্যাপ করলেই কাছে কোথায় কী আছে তা দেখা যায়। কোনো কোনো রেস্টুরেন্টে সরাসরি ‘ওপেন টেবিল’-এর মাধ্যমে বুকিংও করা যায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই থাকে ‘স্ট্রিট ভিউ’-এর ৩৬০ ডিগ্রি ছবি।
অ্যাপল ম্যাপস-এ একইভাবে তথ্যপত্রে ফোন নম্বর, ওয়েবসাইটসহ নানা তথ্য থাকে। সেখানে আপনি নিজের নোটও সংরক্ষণ করতে পারেন। ‘সার্চ’ বক্সে গিয়ে ‘ফাইন্ড নিয়ারবাই’ অপশন ব্যবহার করে কাছাকাছি লোকেশন দেখা সম্ভব। এখানেও আছে ‘লুক এরাউন্ড’ নামে ৩৬০-ডিগ্রির ছবি দেখার সুযোগ।
পছন্দের জায়গা বুকমার্ক করতে গুগল ম্যাপসে ‘সেইভ’ বোতাম বা অ্যাপল ম্যাপসে ‘+’ চাপলেই হয়। সেইভ করা জায়গাগুলো গুগল ম্যাপস-এ ‘ইউ’ ট্যাবের ‘লিস্টস’ অংশে সংরক্ষিত থাকে, যেখানে ‘ট্রাভেল প্ল্যানস’ নামের ডিফল্ট তালিকাও আছে। অ্যাপল ম্যাপসে এই জায়গাগুলো দেখা যাবে ‘ম্যাপস লাইব্রেরি’-তে।
গাইড ও তালিকা তৈরি করুন
গুগল ও অ্যাপল উভয়ই নির্দিষ্ট এলাকা নিয়ে সাজানো গাইড সরবরাহ করে। গুগল ম্যাপসে ‘এক্সপ্লোর’ ট্যাব থেকে স্থানীয় গাইড দেখা যায়, আবার ‘কন্ট্রিবিউট’ ট্যাবে গিয়ে নিজের গাইড তালিকাও বানানো যায়। অ্যাপল ম্যাপস-এ ‘এক্সপ্লোর গাইডস’ বোতামে ট্যাপ করে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ভ্রমণ পরামর্শ।
স্ক্রিনশটকেই বানিয়ে ফেলুন ভ্রমণের ছক
অনেকে ভ্রমণের জন্য স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন রিভিউ, ছবি বা লেখা। গুগল ম্যাপসের নতুন ফিচার ‘স্ক্রিনশটস’ এখন সেই ছবিগুলো থেকেই বানিয়ে দিতে পারে ভ্রমণের পরিকল্পনা।
গুগল ম্যাপসে ‘ইউ’ ট্যাবে গিয়ে ‘স্ক্রিনশটস’ অপশন পাবেন। একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও ও অনুমতি নেওয়ার পর, পূর্বের স্ক্রিনশটগুলো অ্যাপে ইমপোর্ট করতে পারবেন। এরপর গুগলের জেমিনাই এআই সেই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে একটি তালিকা বানাবে যেখানে থাকবে লোকেশনের তথ্য, মানচিত্র ও নিজের নোট লেখার সুযোগ।
আইওএস-এ ফিচারটি এখন চালু আছে, অ্যান্ড্রয়েডে আসবে খুব শিগগিরই।
শহর নয়, প্রাকৃতিক ভ্রমণেও সহায়তা
শুধু শহর ঘোরার জন্য নয়, জাতীয় উদ্যান কিংবা হাইকিং রুট খোঁজার কাজেও কার্যকর এই ম্যাপ অ্যাপগুলো। গুগল ম্যাপস কয়েক বছর আগে থেকেই জনপ্রিয় ট্রেইল ও পার্ক নিয়ে তথ্য দিচ্ছে। শুধু খুঁজলেই পাওয়া যাবে কাছাকাছি পার্ক বা ট্রেইলের তথ্য।
অ্যাপল ম্যাপসের সর্বশেষ আপডেটে যুক্ত হয়েছে বিস্তারিত হাইকিং রুট ও টপোগ্রাফিক মানচিত্র। ব্যবহারকারী চাইলে নিজেই নিজের রুট তৈরি করতে পারেন মানচিত্রে শুরু বিন্দু ঠিক করে ‘ক্রিয়েট এ কাস্টম রুট’ অপশনে গিয়ে নির্দেশনা মেনে চললেই হবে।
ইন্টারনেট ছাড়াও ব্যবহার সম্ভব
দুর্গম এলাকায় সিগনাল না থাকলেও সমস্যা নেই। আগেই মানচিত্র ডাউনলোড করে রাখা যায়।
গুগল ম্যাপসে লোকেশনের নাম চাপুন, ‘মোর’ মেনু থেকে ‘ডাউনলোড অফলাইন ম্যাপ’ বেছে নিন। অ্যাপল ম্যাপসে প্লেস কার্ডে থাকা ‘ডাউনলোড’ বোতামে চাপলেই কাজ হবে।
এয়ারপোর্টে সময় কাটানো ও পথ খোঁজাও সহজ
অপরিচিত এয়ারপোর্ট বা ফ্লাইট বিলম্বের সময়েও ম্যাপ অ্যাপগুলো হতে পারে বন্ধু। গুগল ম্যাপসে এয়ারপোর্ট সার্চ করে পাওয়া প্লেস কার্ডে ‘ডিরেক্টরি’ অপশনে ট্যাপ করলেই পাওয়া যাবে দোকান, খাবারের জায়গা ও অন্যান্য তথ্য।
অ্যাপল ম্যাপসেও এয়ারপোর্ট কার্ডে বিভিন্ন বাটন দিয়ে পাওয়া যাবে নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট, রেস্টুরেন্ট বা শপের অবস্থান। ম্যাপ জুম করে আরও বিশদভাবে টার্মিনাল দেখা যাবে।
গাড়ি চালাতে চাইলে কাস্টমাইজ করুন
গুগল ম্যাপস দিয়ে রুট প্ল্যান করে চালানোর সময়, আপনার লোকেশনের ব্লু অ্যারো আইকনে ট্যাপ করলে সেটির রং ও গাড়ির ডিজাইন বদলে নিতে পারেন। একটু স্টাইলের ছোঁয়া নিয়েই বেরিয়ে পড়ুন পরবর্তী অভিযানে।
ভ্রমণ প্রস্তুতির সবকিছু এখন হাতের মুঠোয়। শুধু গুগল বা অ্যাপল ম্যাপস খুঁজে নিন আপনার গন্তব্য, আর বাকিটা স্মার্টফোন সামলাবে। তবে প্রযুক্তির উপর ভরসা করলেও, নিজের চোখ খোলা রাখাই সেরা ভ্রমণের কৌশল।
