মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এক গুরুত্বপূর্ণ আসিয়ান সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীর ছদ্মবেশে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন ছয় বাংলাদেশি নাগরিক। তবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কড়া নজর এড়াতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার বুকিত কাইয়ু হিটেম সীমান্ত চৌকিতে এ ঘটনাটি ঘটে।
দেশটির বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সি (একেএসএ)-এর কমান্ডার সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মোহাম্মদ নাসারউদ্দিন এম নাসির ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও দুজন নারী, যাদের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। চারজন পুরুষ ও একজন নারী পরেছিলেন কালো স্যুট, আর আরেকজন নারী ছিলেন ঐতিহ্যবাহী শাড়িতে আকর্ষণীয় পোশাকে— যেন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রতিনিধি দলের সদস্য।
তবে তাদের চালচলন, কথাবার্তা ও নথিপত্রে অসঙ্গতি লক্ষ্য করে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সন্দেহে পড়েন। পরবর্তীতে বিস্তারিত যাচাইয়ে দেখা যায়, তারা নির্ধারিত প্রবেশ শর্ত পূরণে ব্যর্থ এবং ভ্রমণের বৈধ উদ্দেশ্যও প্রমাণ করতে পারেননি।
মোহাম্মদ নাসারউদ্দিন বলেন, এই ব্যক্তিদের প্রকৃত পর্যটক হওয়া নিয়ে আমাদের গভীর সন্দেহ রয়েছে। তাদের অন্য কোনো অবৈধ উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
তিনি আরও জানান, বৈধ নথি ও যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে না পারায় তাদের একই প্রবেশপথ দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কমান্ডার নাসারউদ্দিন জোর দিয়ে বলেন, বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সি সর্বদা দেশের প্রবেশদ্বারগুলো সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আসিয়ান সম্মেলন উপলক্ষে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রবেশপথে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে ইমিগ্রেশন ও বিশেষ শাখা কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে ছয় বাংলাদেশির এ ধরনের আচরণ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চোখে সন্দেহজনক মনে হওয়াই স্বাভাবিক বলে মত পর্যবেক্ষকদের।
এই ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। কুয়ালালামপুরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফয়সাল রশিদ বলেন, মালয়েশিয়ায় এর আগেও জাল নথি বা অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা নিয়ে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব বারবার বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। এতে পরিশ্রমী ও আইন মেনে চলা অভিবাসী বাংলাদেশিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অন্যদিকে অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত নয়, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তিকেও প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে পাসপোর্ট–ভিসা সংক্রান্ত সচেতনতা এবং আইন মানার মানসিকতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বর্তমানে ইমিগ্রেশন নিরাপত্তা জোরদারে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রবাসী ও পর্যটকদের উচিত নথিপত্রের সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করা ও ভিসার শর্তাবলী মেনে চলা।
আসিয়ান সম্মেলনের ছায়ায় এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও সামনে এলো এক চিরচেনা বাস্তবতা—কিছুজনের অসচেতনতা ও প্রতারণা বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে, অথচ বিশ্বজুড়ে পরিশ্রমী ও আইন মান্যকারী লাখো বাংলাদেশি আজও দেশের মুখ উজ্জ্বল করে চলেছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হবে।