ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশ সহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও দেশটির এমন কোনো সরকারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যা ভারতের মূল স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে।
বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে "আমরা কি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?" শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রিংলা বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা সম্পর্কে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, দলটি "একটি চিতাবাঘ (যে তার) দাগ পরিবর্তন করবে না।"
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, "এটা বলা ঠিক যে, আমরা যে কেউ ক্ষমতায় আসবে তার সাথেই কাজ করব। কিন্তু যদি সেই কেউ আপনার স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাহলে আপনাকে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।"
ভারত প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সম্মান করে পুনরায় এমন দাবি করে রাজ্যসভার এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, "যখন আমাদের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া দেশগুলোর কথা আসে, তখন সম্পূর্ণভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে কিছু থাকে না।"
টেলিগ্রাফ কলকাতার প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) জয়লাভ করেছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে কোনো ইসলামপন্থী দলের প্রথম বিজয়। বিষয়টি উল্লেখ করে শ্রিংলা দাবি করেন, "এই দলটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি "সহায়ক শক্তি" হিসেবে কাজ করেছিল এবং সেই সময়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ নানা নৃশংসতার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।''
"তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে এবং তারা মুসলিম ব্রাদারহুডেরও অংশ। সেই মুসলিম ব্রাদারহুড যা বাংলাদেশ, মিশর, পাকিস্তান এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যমান। আর এই চিতাবাঘ তার দাগ পরিবর্তন করতে যাচ্ছে না," যোগ করেন তিনি।
ভারতের এই সাবেক শীর্ষ কূটনীতিক স্বীকার করেন, আসন্ন নির্বাচনে দলটি শক্তিশালী পারফর্ম করতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, "জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে থাকা বর্তমান ব্যবস্থার মাধ্যমে শত্রুভাবাপন্ন শক্তির মধ্যে যোগসাজশের একটি বাস্তব বিপদ" তৈরি করেছে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ এবং সাবেক রাজ্যসভার সাংসদ জওহর সরকার।
এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের বিজয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে শশী থারুর জামায়াত-সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের বিজয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এটি হয়তো বেশিরভাগ ভারতীয়র কাছে আলোড়ন সৃষ্টি করেনি, কিন্তু এটি ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ও বিএনপির প্রতি মানুষের বিরক্তি বেড়েছে। অনেকে এই দুই দলের বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে বেছে নিচ্ছে। ধর্মীয় উগ্রতার কারণে নয়, বরং এজন্য যে দলটি, সঠিক হোক বা ভুল, দুর্নীতি ও কুশাসনে কলঙ্কিত নয়।’
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘এই প্রবণতা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রতিফলিত হবে? ভারতকে কি তখন প্রতিবেশী হিসেবে জামায়াত সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে?’