কোরবানির ঈদের আগে-আগে মাংস রান্নায় দরকারি মসলার দাম বেড়ে যাওয়ার যে চিত্র অন্যান্য বছর দেখা যায়, এবারের চিত্রটা পুরোপুরি না হলেও বেশির ভাগ মসলার ক্ষেত্রেই উল্টো।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও সাত তলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই একটি পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও, অধিকাংশ মসলাজাত পণ্যের দাম অন্যবারের তুলনায় কম।
ব্যবসায়ীরা কেউ-কেউ বলছেন, ভারত থেকে অবৈধভাবে আসায় এবছর গরম মসলার বাজারের গরম ‘কমেছে’।
আবার কোনো-কোনো ব্যবসায়ীর বলছেন, আমদানি ঋণপত্র (এলসি) সহজে খুলতে পারা এবং সিন্ডিকেট ‘না থাকায়’ এ বছর মসলাজাত পণ্যের দাম।
ঢাকার সবচেয়ে বড় মসলার বাজার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার।
সেখানকার বিক্রেতা মো. আফজাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ায় এ বছর মসলার দাম অন্যান্যবারের চাইতে কম। দুই একটা ছাড়া অধিকাংশ মসলার দামও আয়ত্ত্বে আছে ক্রেতাদের।”
তিনি বলেন, “গেল কোরবানি ঈদে যে জিরার দাম ছিল কেজি প্রতি সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, এবার সেটা ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।”
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির খুচরা পণ্য তালিকার তথ্যও একই কথা বলছে। সরকারি এই সংস্থার তথ্যানুযায়ী সপ্তাহের ব্যবধানে লবঙ্গ, এলাচ, ধনে গুঁড়া, আদা, তেজপাতা, মরিচ, হলুদসহ প্রায় সব মসলার দাম কমেছে বা স্থিতিশীল আছে।
আর, বছরের ব্যবধানে বেড়েছে কেবল তেজপাতা আর আমদানি করা হলুদের দাম।
খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি দেশি আদা মানভেদে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং ভারতীয় ও চীনা আদা ১৫০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাততলা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন মানভেদে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ১৫০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা ১৮০ টাকা, আমদানি করা আদা ১১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, শুকনো মসলার মধ্যে হলুদ প্রতিকেজি মানভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আমদানি করা হলুদ ২৮০ থেকে ৪২০ টাকা, মানভেদে দেশি শুকনা মরিচ ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, আমদানি করা শুকনো মরিচ ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল।
বাজারে প্রতিকেজি তেজপাতা ১৪০ থেকে ২২০ টাকা ও ধনে গুঁড়া ১৯০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতীয় জিরা মানভেদে ৬০০ থেকে ৭২০ টাকা, মিষ্টি জিরা ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি মেথি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, গোলমরিচ ১ হাজার ২৫০ টাকা, পাঁচফোড়ন ২২০ টাকা, সাদা তিল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, কালো জিরা মানভেদে ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা, সাদা ও লাল সরিষা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বাদাম ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সাত তলা বাজারের মুদি দোকানি ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মসলার বাজারদর এবার অন্যবারের চেয়ে কম। কিছু মসলা যেগুলো পরিমাণে কম লাগে, এরকম মসলার দাম কিছুটা চড়া, তবে সেটা অন্যবারের তুলনায় কম।”
বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ভারতীয় এলাচ মানভেদে ৪ হাজার ৪০০ থেকে ৫ হাজার টাকা, বড় দানা এলাচ মানভেদে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ৪৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০-৮০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২৫০ টাকা, কিশমিশ ৬২৯ থেকে ৭০০ টাকা, আলুবোখারা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, জয়ত্রী ২ হাজার ৮৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি।
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আল আমীনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় জিরা পাইকারি দামে কেজিতে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সাধারণ মানের জিরা ২০ টাকা, মিষ্টি জিরা ৩০ টাকা, লবঙ্গ ২০ থেকে ৩০ টাকা, দারুচিনি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম গতবছরের চেয়ে কমেছে।
সাত তলা বাজারে ঈদের জন্য মসলা কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী রাশেদা বেগম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মসলার যে দাম কম, বিষয়টা এমন না। তবে, গেলবারের তুলনায় কম। যেমন পেঁয়াজ-রসুনের দাম গতবারের তুলনায় কম। জিরার দামও তুলনামূলক কম। তবে, এলাচ, লবঙ্গ এগুলোর বাজার চড়া।”
এই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা মো. মকবুল হোসেন বলেন, “আরও তো একদিন আছে, মসলার দাম আরও বাড়ে কিনা কে জানে। তবে, এ বছর একেবারে লাগাম ছাড়া হয়নি অন্যান্যবারের মতো।”