ওসমান হাদির নামাজে জানাজাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেছেন, শোকের এই আয়োজনকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী তথাকথিত ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের পায়তারা করছে, যা দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য গভীর হুমকি।
এক বিবৃতিতে জাহেদ উর রহমান বলেন, হাদির মৃত্যু নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। আমরা সবাই তার জন্য শোক প্রকাশ করছি। কিন্তু এই শোককে পুঁজি করে যদি কেউ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখে, সেটি হবে ভয়ংকর নৈরাজ্যের সূত্রপাত।
তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বক্তব্য ও স্ট্যাটাসে ‘অসম্পূর্ণ বিপ্লব’, ‘বিপ্লব চূড়ান্ত করা’—এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা স্পষ্টভাবে একটি অগণতান্ত্রিক পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। এই ভাষা কোনো সাধারণ শোক বা প্রতিবাদের ভাষা নয়; এটি রাষ্ট্রের ভেতরে একটি বিকল্প ক্ষমতা কাঠামো তৈরির সংকেত।
জাহেদ উর রহমান আরও বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হলেও সেটিকে ‘বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব হাজির করা রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক।
এটি ছিল গণঅভ্যুত্থান—যার লক্ষ্য ছিল স্বৈরাচারের পতন এবং দেশকে সাংবিধানিক পথে ফেরানো। বিপ্লবী সরকার গঠনের কোনো গণম্যান্ডেট এ দেশে নেই।
তিনি ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট ও উদীচীর ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই হামলাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো পরিকল্পিতভাবে ভয়ের পরিবেশ তৈরির অংশ।সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করা হচ্ছে, যাতে রাষ্ট্রপক্ষের কণ্ঠ রুদ্ধ করা যায়।
সাংবাদিক নুরুল কবিরের ওপর হেনস্তার ঘটনাকেও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন জাহেদ উর রহমান। তাঁর মতে, যারা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেন, তারাই আজ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, এত গোয়েন্দা সংস্থা থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিক হামলা ঠেকানো না পারা সরকারের চরম ব্যর্থতা। হাদির মৃত্যুর আগেই পরিস্থিতির অবনতি আঁচ করা সম্ভব ছিল।
জাহেদ উর রহমান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে যদি কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী বা বিপ্লবী সরকার কায়েমের চেষ্টা হয়, তবে সরকারকে কঠোর হাতে তা দমন করতে হবে। নইলে দেশ আরও গভীর অস্থিরতার দিকে ধাবিত হবে।
তিনি সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিককে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শোকের মুহূর্তে দায়িত্বহীন রাজনীতি নয়, প্রয়োজন সংযম ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা।