ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ যেন এখন এক স্মৃতিবিধুর নীরবতা। ২১ জুলাইয়ের সেই বিভীষিকাময় দিনটি বদলে দিয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থীর জীবনের ছন্দ। বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সব ক্লাস ও পরীক্ষা। একবার ক্লাস চালুর ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কবে খুলবে, তা কেউই নিশ্চিত নন। এদিকে বিধ্বস্তের কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সরকার ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। এছাড়া ঘটনার সবকিছু খতিয়ে দেখতে আসছে একটি চীনা দলও।

মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা এখনো মানসিকভাবে ট্রমায় ভুগছে। শিক্ষক-কর্মচারীরাও নিস্তব্ধ, বিপর্যস্ত। একের পর এক মৃত্যুর খবর, হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা সহপাঠীদের অবস্থা-সবমিলিয়ে শিক্ষাঙ্গনে ফেরার মনোবল পাচ্ছে না কেউই।

মাইলস্টোনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, এ সপ্তাহে খুলছে না প্রতিষ্ঠানটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি বলেন, রোববার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে সরে আসা হয়। প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর আসছে। এ অবস্থায় ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। ২১ জুলাই দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে আছড়ে পড়ে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে সরকার। আহতদের কেউ কেউ এখনো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

এদিকে বিধ্বস্তের কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সরকার ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। রোববার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাবেক সচিব একেএম জাফর উল্লা খানকে সভাপতি করে গঠিত এই কমিশন চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

কমিশনে আছেন বিমানবাহিনীর সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল এম সাঈদ হোসাইন, প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. আশিকুর রহমান এবং ব্যারিস্টার আশরাফ আলি। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় এ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শন এবং যে কোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিশন ২১ জুলাই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিত, কারণ ও দায়দায়িত্ব উদ্ঘাটন করবে। ওই ঘটনায় স্কুলের ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যদের জীবনহানি ও গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়সহ সব ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ঘটনাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় চিহ্নিত করবে। বিমানবন্দরের অতি নিকটবর্তী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও অপরাপর স্থাপনা নির্মাণ এবং ফ্লাইং জোনের অবস্থানগত সঠিকতা ও নিরাপদ পরিচালন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনগত ও প্রশাসনিক বিষয়গুলো পরীক্ষা করবে। কমিশন দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন, ফ্লাইং জোনে ভবন নির্মাণ এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত সুপারিশ দেবে। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ প্রদান করবে।

এদিকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এভিয়েশন ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিমানবাহিনীর ডিরেক্টর অপারেশন এয়ার কমোডর শহীদুল ইসলাম জানান, এ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ধারণে চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল শিগ্গিরই তদন্তে যোগ দেবে। এছাড়াও জানানো হয়, রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকায় যুদ্ধবিমান ঘাঁটি থাকা অপরিহার্য। বিমানঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

এদিকে মাইলস্টোন স্কুলের প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, স্কুলটি নির্মাণে রাজউকের নিয়ম মেনেই কাজ করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আমরা শোকাহত। তবে মাইলস্টোন সব সময় নিয়ম মেনে চলেছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার আগে বা পরে কোনো অব্যবস্থাপনা ছিল না। এখন শুধু চাই তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হোক।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews