ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)
৩ ঘন্টা আগে
ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি গত ২৪ ঘণ্টায়। এই অবস্থাকে স্থিতিশীল মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় পৌঁছে এরই মধ্যে চিকিৎসক দলের সাথে যুক্ত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং।
এর আগে মঙ্গলবারই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ব্রিটিশ এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঢাকায় আসার কথা জানিয়েছিলেন।
গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য অবস্থা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে মঙ্গলবার ডা. জাহিদ হোসেন ব্রিফিং করে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে সেটি গ্রহণ করতে পারছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বিষয়ে আর কোনো ব্রিফিং করা হয়নি।
গত ২৪ ঘণ্টায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গতকালের মতোই স্থিতিশীল অবস্থায়ই আছেন তিনি।
'সংকাটাপন্ন' অবস্থা থেকে ওষুধ গ্রহণের বিষয়টিকে আপাতত ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে জানিয়ে মি. ইসলাম বলছিলেন, "যেহেতু ওষুধে রেসপন্স করছে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমি মনে করি এটা একটা গুড সাইন"।
দুপুরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে দুপুরে হাসপাতালে যান মৎস্য ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সন্ধ্যায় সেখানে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ২৩শে নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার পর ওইদিন থেকেই ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন খালেদা জিয়া। ২৭শে নভেম্বর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে নিবিড় চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড।

ছবির উৎস, ZUMATUL BIDA
ছবির ক্যাপশান,
এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পরই দেশের চিকিৎসক টিমের সাথে যুক্ত হন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসরা।
গতকালই খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানান, ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসার পর তাদের পরামর্শেই পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড।
বুধবার সকালে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসক রিচার্ড বেলে ঢাকায় পৌঁছান। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে যুক্ত হন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিতে মেডিকেল বোর্ডের সাথে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল সশরীরে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ব্রিটিশ এই বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অন্য যে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সেবায় যুক্ত ছিলেন তাদের সবার কাছেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের রোগের কেস সামারি রয়েছে"।
"তারা সশরীরে দেখার পরই দেশের মেডিকেল বোর্ডের যারা রয়েছেন তাদেরকে সাথে নিয়ে ক্লিনিক্যাল মিটিং করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন", বলছিলেন মি. ইসলাম।
এই চিকিৎসক জানান, বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই নতুন করে কী চিকিৎসা দেওয়া যায় সেটি নিয়েও সিদ্ধান্ত নেবেন বিদেশি চিকিৎসকসহ মেডিকেল বোর্ড।

ছবির উৎস, BNP MEDIA CELL
ছবির ক্যাপশান,
গত ২৩শে নভেম্বর হাসপাতালে নেয়ার সময় তোলা ছবি
গত ২৩শে নভেম্বর থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া ভর্তি হওয়ার পর তার ফুসফুসে সংক্রামণে অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭শে নভেম্বর থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসকরা তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় নিবিড়ভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তাকে যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে সেটি তিনি গ্রহণ করতে পারছেন।
মি. জাহিদ এর আগে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা রয়েছে।
ডা. রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "একজন রোগী যখন ওষুধ গ্রহণ করেন তার মানে আমরা ধরে নেই এটা একটা ইতিবাচক দিক। চিকিৎসকরা তখন মনে করেন রোগীর শরীর এটাকে অ্যাডজাস্ট করে নিচ্ছে"।
এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা কী হবে সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। এর জবাবে বিএনপির এই চিকিৎসক জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল টিমের বৈঠক শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে কি-না সেটি নিয়েও এখন নানা আলোচনা চলছে।
জবাবে ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড যদি মনে করে তাকে এই অবস্থায় দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব সেটি বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে রাতেই চীনের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও বাংলাদেশে আসছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।

ছবির উৎস, BNP MEDIA CELL
ছবির ক্যাপশান,
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোয়া, মোনাজাত ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বুধবারও দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করে বিএনপি ও বিভিন্ন সংগঠন।
দুপুরে সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বুধবার খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন।
ঢাকা ও ঢাকার বাইলে ঝিনাইদহ, সুনামগঞ্জ, বাগেরহাট, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোগমুক্তি কামনায় কোরআন খতম, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
এছাড়া দেশের বাইরেও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে দ্রুতই খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করা হয়।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঢাকার যেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তার পাশের একটি মাঠে পরীক্ষামূলকভাবে হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়ন নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালনা করবে। দুপুর ১২টা থেকে চারটার মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালের কাছে দুটি উন্মুক্ত মাঠে এটা হবে।
এ বিষয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়।