গণ-অভ্যুত্থানের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন আসলে কতটুকু সরকারি সুবিধা হাসিলের জন্য আর কতটুকু প্রকৃত অর্থে আদর্শিক কারণে ছিল, তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের তর্কে লিপ্ত থাকতে পারেন। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি ও উন্নয়নের নামে লুটপাট বহুদিন ধরেই সরকারের ওপর অনাস্থার কারণ হয়েছিল। হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রীরা বহুদিন ধরেই কখনো জনগণকে হেয় করে, কখনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হেয় করে, কখনো সাংবাদিকদের হেয় করে উসকানিমূলক বক্তৃতা দিতেন।
যেকোনো সমস্যার দায়ভার অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া, নিজেরা যেকোনোভাবে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা—এগুলো বহুদিন ধরে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। আবু সাঈদের বুকে গুলি করে এই সরকার আরও একবার প্রমাণ করেছিল যে সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে নয়, বরং জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। এ অনুভূতি যদিও এর আগে ছিল, এ ঘটনা নতুন স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে; যার প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন লোপ পেতে থাকে।
ছাত্র আন্দোলনের একটি সমষ্টিগত প্রভাব ধীরে ধীরে সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থনের অবসান ঘটায়। শুরুতে এই সমর্থন হ্রাসের লক্ষণগুলো স্পষ্ট না হলেও প্রথমে ছাত্রলীগ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী-সদস্যের পদত্যাগ; দ্বিতীয়ত শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমজীবী মানুষ ও আইনজীবীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জনমনে প্রভাব সৃষ্টি করে। পরের দিকে আন্দোলনের প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন শাসনব্যবস্থার মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দিতে সমর্থ হয়।