ঢাকা: প্রযুক্তির হাওয়ায় বিশ্বব্যাপী ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে। ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের বাইরে এখন ‘মনিটাইজেশন’ সুবিধার সুবাদে অনেকে এসব প্লাটফর্মের পেশাদার কনটেন্ট ক্রিয়েটরও হয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ইউটিউবারসহ কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এই উপদ্রব অনেক বেশি নজরে এসেছে। নাম সর্বস্ব কিছু গণমাধ্যমের কর্মী, ইউটিউবারসহ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে সেখানে উদ্ধারকাজ যেমন বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীদেরও সংবাদ সংগ্রহে বেগ পেতে হয়েছে। ‘ভিউ’ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এসব ইউটিউবারসহ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও উৎসুক জনতাকে সরাতে কয়েক দফায় লাঠিচার্জও করা হয়। এতে আক্রান্ত হন মূলধারার সংবাদকর্মীসহ ফটোসাংবাদিকরাও। তারপরও নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন এসব ইউটিউবারদের সরানো যায়নি। স্রেফ ‘ভিউ’ কামানোর নেশা থেকে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা ছাড়াই তারা প্রচার করেছে দুর্ঘটনায় আহত-দগ্ধদের বীভৎস সব ছবি-ভিডিও, ছড়িয়ে দেয় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিসহ নানা অপতথ্য। তাদের কারণে মূলধারার সংবাদকর্মীরা অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য, ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করতে পারেননি।
কী করছেন ইউটিউবার-কনটেন্ট ক্রিয়েটররা
শুধু মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি নয়, যেকোনো বড় দুর্ঘটনা বা সংকটময় সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলে পড়েন ইউটিউবারসহ কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা। তারা ঘটনার সংবেদনশীলতার তোয়াক্কা না করে ভয়াবহ দুর্ঘটনাকেও উপস্থাপন করেন বিনোদনের উপকরণ হিসেবে। ধর্ষণ, নির্যাতন বা হয়রানির শিকার শিশু বা নারীর ছবি-ভিডিও সরাসরি বা রেকর্ড করে প্রচার করে দেন। অগ্নিদুর্ঘটনার সময় তারা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সামনে দিয়ে বসেন মাইক্রোফোন। কেউ কেউ ভিডিও করতে করতে চলে যান আগুন বা বিপজ্জনক স্থানের কাছাকাছি, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নানা অজুহাতে তারা ঢুকে পড়েন ‘কর্ডন’ করে রাখা নিরাপত্তা বেষ্টনীতেও।
গত মার্চে মাগুরায় এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা গোটা দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করে। ঘটনাটিতে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়। সেসময় ইউটিউবার-কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ওই শিশু ও তার পরিবারের ছবি দিয়ে প্রচুর ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে। যা নজরে এলে শিশুটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
মাইলস্টোন বা মাগুরার ওই দুটি ঘটনাই নয় শুধু, এমন নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় ইউটিউবার-কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ‘ভিউবাণিজ্যকেন্দ্রিক’ দায়িত্বহীনতা সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। অস্বস্তি ও বিরক্তিতে ফেলছে পেশাদার সাংবাদিকদের।
একটি জাতীয় দৈনিকের একজন প্রতিবেদক বাংলানিউজকে বলেন, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ইউটিউবারদের অসংগঠিত ভিড় আমাদের কাজকে কঠিন করে তোলে। অনেক সময় তারা ভিকটিম বা প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে তাদের ভিডিও করতে থাকেন, যা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। ইউটিউবারদের এই বেহায়াপনা শুধু সাংবাদিকতাকেই নয়, দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাকেও বিঘ্নিত করে।
এ বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনের সাংবাদিক পিয়াস সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ডিজিটালাইজেশন হবে এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে গত কয়েক বছরে বেড়েছে ইউটিউবারদের সংখ্যাও। এই বৃদ্ধিটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা ভিউয়ের আশায় লিখিত-অলিখিত কোনো নিয়মই মানছেন না। সব থেকে খারাপ হচ্ছে অনুমতি ছাড়া ভিডিও নেওয়া। ভিউয়ের আশায় কে হেলমেট পরলো না সেটাও তাদের কন্টেন্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যেমন মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি, এসব স্থানে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। উৎসুক জনতার থেকেও তারা ক্ষতির কারণ হচ্ছেন। তাদের নিবারণ নয়, বরং লিখিত ও অলিখিত নিয়মগুলো নিয়ে তাদের ট্রেনিং দেওয়া উচিত।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, এসব ইউটিউবার বা কনন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের সিংহভাগই জানেন না, বিষয়বস্তু কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে; কোনো ঘটনার ভিকটিমের প্রতি আচরণ কী হবে; তাদের বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশের ধরনটা কোন নীতিতে হবে।
গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থানে স্বাধীন কনটেন্ট তৈরি সহজ হয়েছে, তবে এর সঙ্গে রয়েছে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নও। যারা সাংবাদিকতা বা তথ্য সংগ্রহের পেশাগত প্রশিক্ষণ ছাড়া ‘সংবাদমুখী কন্টেন্ট’ তৈরি করছেন, তাদের জন্য নীতিমালা না থাকায় বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
সংবাদকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে ‘কন্টেন্ট’ নামের যে নতুন মাধ্যম গড়ে উঠছে, তা যদি এভাবে নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধহীনভাবে পরিচালিত হয়, তবে তা সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে সাংবাদিকদের সঙ্গে ইউটিউবার এবং নিজস্ব চ্যানেলধারী আধেয় নির্মাতারা ভিড় করছেন। এর মূল কারণ তার নিজস্ব ডিজিটাল মিডিয়ার উন্নতি করা। তারা ব্যক্তি চ্যানেল খুলে নিজের মতো আধেয় বানাচ্ছেন। সংবাদকর্মী পরিচয়ে যেকোনো জায়গায় ঢুকে যাচ্ছেন। তাদের অপেশাদার আচরণের কারণে মূলধারার সংবাদকর্মীদের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কর্তৃপক্ষকেই এই সমস্যাটি সামাল দিতে হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাতিল সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে যখনই কোনো ঘটনা ঘটে, এত বেশি উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়, সেখানে সংবাদকর্মীদের কাজ করা মুশকিল হয়ে যায়। আজকাল এত বেশি নাম না জানা, অজানা, অচেনা সংবাদমাধ্যম বা সংস্থার নামে মানুষ সংবাদ সংগ্রহ করতে চলে যায়, তারা আদৌ পেশাদার সংবাদকর্মী কিনা এটা অনেক সময় বুঝে ওঠা যায় না।
এই সমস্যা সমাধানের সহজ কোনো পথ নেই বলে মনে করেন শাতিল সিরাজ। তিনি বলেন, একজন পেশাদার সংবাদকর্মী, সাংবাদিক নীতি-নৈতিকতা মেনে যে প্রক্রিয়া কাজ করেন, তা উৎসুক জনতা বা ইউটিউবারদের নেই। তারা জানেনই না, একজন সংবাদকর্মীর কী দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকা উচিত। ফলে তারা অনেক সময় সংবাদ সংগ্রহে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন৷
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শাতিল সিরাজ বলেন, কোনো ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কর্তৃপক্ষকে পেশাদার সাংবাদিক ছাড়া অন্যরা যাতে ঝামেলা তৈরি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ইউটিউবে কন্টেন্ট ক্রিয়েট বা সিটিজেন সাংবাদিকতা যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। এক্ষেত্রে যদি কোনো গাইডলাইন তৈরি যায় তাহলে মূলধারার সাংবাদিকরা যেমন প্রচলিত আইন মেনে কাজ করেন, তেমনি অন্যরাও করবেন। তবে তার মানে এই নয় যে তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তবে কোনো আইন বা গাইডলাইন করে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হোসাইন বকুল। তিনি এক্ষেত্রে শিশুদের নীতি-নৈতিকতা শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।
মো. মোজাম্মেল হোসাইন বকুল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিকাশ এমন একদল মানুষের হাত ধরে যাদের মিডিয়া লিটারেসি নেই, সোশ্যাল মিডিয়া লিটারেসির কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ সাধারণভাবে মিডিয়াকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা কম, আর সোশ্যাল মিডিয়ার ফিল্টারিং সিস্টেম না থাকায় এটার ব্যবহার যে কত ভালোভাবে করা যায় এ ব্যাপারে তাদের ধারণা একেবারে নেই। তারা এটাকে স্রেফ ভিউ ব্যবসার মতো করে নিয়েছে৷ এদের কারণে সাধারণ সাংবাদিকতা যারা করছেন তারা খুব বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছেন। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনার পর এটা আরেকবার দেখা গেল। তাদের কারণে সাধারণ মিডিয়াকর্মীরাও ঠিকভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেননি, উদ্ধারকারীরাও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হিমশিম খেয়েছেন।
এই সমস্যার সমাধান রাতারাতি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কারণ যখনই সামাজিক মাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করাকে কাঠামোর মধ্যে আনতে চাইবো, তখনই আমাদের মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টির মত ঘটনা ঘটবে। এটা ঠিক হবে না৷ এক্ষেত্রে করণীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। যারা এগুলো ব্যবহার করছে তাদের বোধবুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে হবে। এটা যথাযথ শিক্ষা ছাড়া সম্ভব না। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাটাই হয়ে গেছে এমন যে সাধারণ বোধবুদ্ধি তৈরি হচ্ছে না। এই কাজটি স্কুল পর্যায়ে থেকে করতে হবে।
মোজাম্মেল হোসাইন বকুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গোটা জাতি হিসেবে যে একটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, বিবেক-বোধহীন হয়ে উঠছে, এটার একেবারে গোড়ায় যেতে হলে আমাদের যেতে হবে প্রাইমারি স্কুলে। জাপানসহ বিভিন্ন দেশে স্কুলের ছোট ছোট শিশুদের এই নীতি-নৈতিকতা শেখানো হয়। কীভাবে দেশসেবা করতে হবে, নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে, মানুষের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এগুলো শেখানো হয়। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে তাদের স্কুল পর্যায়ে এগুলো শেখানো হয়। আমাদের দেশে একটা সময় স্কুলে এগুলো শেখানো হতো। এখন একেবারে পঁচন ধরে গেছে।
‘আমরা যখন ছোট শিশুদের নীতি-নৈতিকতা শেখানোর মাধ্যমে একটি নাগরিকগোষ্ঠী তৈরি করতে পারব, তখন তাদের মধ্যে কোথায় কী করতে হবে না হবে, এই বোধশক্তি গড়ে উঠবে। এটা আইন করে বা কোনো কাঠামোর মধ্যে ফেলে করা সম্ভব নয়। মূল কথা আমাদের বোধ বিবেচনা বাড়াতে হবে। এজন্য আমাদের সুশিক্ষার দরকার। ছোট ধরে যদি আমি এটা করতে পারি তাহলে একটি ভালো প্রজন্ম পাবো। তাহলে তারা নির্মোহের মতো কাজ করবে না। ' যোগ করেন এই অধ্যাপক।
কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে
নানা ঘটনায় ইউটিউবার-কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের উপদ্রব সরকারেরও নজরে এসেছে। তাদের উদ্দেশ্য করে সোমবার (২৮ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারিও দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, সংবাদ সংগ্রহের কিছু নিয়ম রয়েছে। আপনারা (ইউটিইউবার) সেই নিয়মগুলো মেনে চলবেন। তা না হলে আগামীতে আমরা আপনাদের জন্য কিছু নির্দেশমালা দিতে বাধ্য হবো। আমরা এই জিনিসটা মাইলস্টোনে দেখেছি। আমরা আপনাদের সাংবাদিকতা করার অধিকারকে সম্মান করি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আপনারা (ইউটিউবার) মিনিমাম সেন্স অ্যাপ্লাই করেন না। যে কারণে যারা সত্যিকার অর্থে সংবাদ সংগ্রহ করেন, তাদের জন্য এটা কঠিন হয়ে যায়। আপনারা এই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। পারলে সংবাদ সংগ্রহের কী কী নিয়ম-কানুন আছে, আপনারা সেটা নিজেরা নিজেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে জেনে নেবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রেই এটা ডিজাস্টারের সময় কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। আপনারা বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে চিন্তা করবেন। এটা আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ।
এসসি/এইচএ/