রাজধানীতে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদের পড়াশোনার খরচ মিটতো স্থানীয়দের তোলা ‘চাঁদার টাকায়’। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় অনেকে তাকে দান-খয়রাত করত। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তার বিলাসিতা এবং বাড়িতে পাকা ঘর তোলা দেখে হতবাক হয়ে পড়েন সবাই।

রিয়াদ নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ব্যাপারী বাড়ির রিকশাচালক আবু রায়হানের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ছোটবেলা থেকে রিয়াদ পড়ালেখায় ভালো ছিল। গরিব ঘরের সন্তান হওয়ায় তার লেখাপড়ার খরচ এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে জোগাড় করে দিত। তার বাবা রিকশা চালিয়ে যা আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতেন। সবার সহযোগিতায় ২০২১ সালে রিয়াদ কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট মুজিব কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াদ এলাকায় এলে তার চলাফেরা দেখে সবাই থ হয়ে যেত। তার এই বিলাসিতা ও বাড়িতে পাকা ঘর তোলার টাকার উৎস কারও জানা ছিল না।

রিয়াদের চাচা মো. জসিম উদ্দিন জানান, দুই-তিন মাস আগে রিয়াদ বাড়িতে ঘর নির্মাণের কাজে হাত দেন। আগে ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘর ছিল। তাদের ভিটা ছাড়া আর কোনো জায়গাজমি নেই।

নবীপুর হাই স্কুলের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের স্কুলের এক সময়ের ছাত্র রিয়াদকে সবাই দান-খয়রাত করে সহযোগিতা করত। কারণ তার রিকশাচালক বাবার পক্ষে পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। কীভাবে সে এত ভয়ংকর চাঁদাবাজ হয়ে উঠেছে, তা সত্যিই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

সোমবার রিয়াদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। বাড়িতে নেই রিয়াদের বাবা-মা। বাড়ির অন্য লোকজনের মাধ্যমে জানা গেল পাশের একজনের ঘরে রিয়াদের বড় বোন তাসলিমা আক্তার আরজু রয়েছেন। প্রথমে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা বা কথা বলতে চাননি তিনি। পরে একপর্যায়ে নিজেদের নির্মাণাধীন ঘরের সামনে আসেন আরজু। তখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

তাসলিমা আক্তার আরজু বলেন, আমার বাবা রিকশা চালাতেন এটা ঠিক আছে। ২০২৪ সালের বন্যায় বাবার বসতঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এখন সবার প্রশ্ন আমাদের ঘরটা কিভাবে উঠতেছে, এত টাকা কোথা থেকে আসল। তিনি বলেন, আমাদের দুই বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। আমাদের স্বামীদের অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট ভালো, তাছাড়া আমার আরেক ভাই ঢাকায় চাকরি করে। বন্যায় ঘরটির ক্ষতি হওয়ার পর গ্রামবাসীর সহযোগিতা, আমাদের দুই বোনের স্বামীদের সহযোগিতা এবং আমার আরেক ভাইও কিছু টাকা দিয়েছে। এর বাইরে আমার বাবা বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তি (ঋণ) নিয়েছেন। ঘর যেটুকু উঠেছে, তাতেও রড, সিমেন্ট ও বালুর দোকানে অনেক টাকা বাকি আছে। এছাড়া আমার বোনের স্বামী রাজমিস্ত্রি হওয়ায় তিনি নিজে লোকজন নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে ভবন নির্মাণের কাজ করছেন।

তাসলিমা আক্তার আরও বলেন, আমার ভাই রিয়াদ যদি কোনো অপরাধ করে, তার শাস্তি হবে। আর যদি সে নিরপরাধ হয় তাহলে মুক্তি পাবে। কিন্তু তার জন্য আমার বাবার ঘর নিয়ে এত আলোচনা হবে সেটা আমাদের জানা ছিল না। একজন রিকশাচালক কি কখনো ঘর করতে পারবে না। গত কয়েকদিন আমার ভাইয়ের বিষয় নিয়ে মানুষের মুখে বিভিন্ন কথা এবং পত্র-পত্রিকায় সংবাদ দেখে আমার মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোববার রাতে তাদের ফেনীর দাগনভূঞায় পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে ওই হাসপাতালের পরিচালক আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, সেখানে তাদের ভর্তি করানো হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর সাংবাদিকদের আনাগোনা বন্ধ হলে রিয়াদের বাবা-মা বাড়িতে ফেরেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews