গুগলের যে প্রযুক্তি বা সিস্টেম ভূমিকম্পের আগেই মানুষকে সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে তা ২০২৩ সালে তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় ঠিকভাবে কাজ করেনি।
ফলে সেখানকার এক কোটি মানুষ সময়মতো সতর্ক হতে পারেননি। আর এই ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছে মার্কিন সার্চ জায়ান্টটি।
গুগল ওই সিস্টেমের মাধ্যমে ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ১৫৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা এক কোটি মানুষকে তাদের সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কবার্তা পাঠাতে পারত।
এ সতর্কবার্তা ঠিকমতো পাঠানো গেলে সর্বোচ্চ ৩৫ সেকেন্ড আগেই ভূমিকম্প সম্পর্কে জানতে পারত তুরস্কের বাসিন্দারা এবং সেই সময়টুকু ব্যবহার করে তারা নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার সুযোগ পেত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এর বদলে সাত দশমিক আট মাত্রার প্রথম ভূমিকম্পের সময় কেবল চারশ ৬৯ জনকে ‘সতর্ক থাকুন ও এখনই পদক্ষেপ নিন’ বলে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল গুগল।
মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিটি বিবিসিকে বলেছে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে নিম্ন স্তরের এক সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল তারা, যা হালকা কম্পনের জন্য তৈরি ও এটি ব্যবহারকারীদেরকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে সতর্ক করে না।
তবে এর আগে প্রযুক্তি কোম্পানিটি বিবিসিকে বলেছিল, তাদের সিস্টেম ‘ভালোভাবে কাজ করছে’।
২০২৩ সালে বিবিসি জানতে পারে ভূমিকম্প সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করার কথা থাকলেও সবাইকে সতর্ক করা হয়নি। তবে এই ভুল বা ব্যর্থতার পরিমাণ আগে জানা যায়নি।
বিবিসি লিখেছে, গুগলের সতর্কতা ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি দেশে কাজ করে। এটিকে ‘বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জাল’ বলে বর্ণনা করেছে গুগল। কারণ এটি এমন অনেক দেশে কাজ করে যেখানে ভূমিকম্পের অন্য কোনও সতর্কতা ব্যবস্থা নেই।
গুগলের এ সিস্টেমটির নাম ‘অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্টস’ বা এইএ এবং সিলিকন ভ্যালির এক কোম্পানি সিস্টেমটিকে পরিচালনা করে, যেটি কোনও নির্দিষ্ট দেশের নয়।
সিস্টেমটি বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে কাজ করে এবং তুরস্কে যত ফোন আছে তার ৭০ শতাংশেরও বেশি ফোনেই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। ফলে তুরস্কের বেশিরভাগ মানুষের ফোনেই এ সতর্কতা পাওয়া সম্ভব।
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে দুইটি বড় ভূমিকম্পে ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান এবং ১ লাখের বেশি মানুষ আহত হন। ভূমিকম্পের সময় অনেক মানুষই এমন ভবনে ঘুমিয়ে ছিলেন, যা কেঁপে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়ে।
বিবিসি লিখেছে, গুগলের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ভূমিকম্পের দিন সক্রিয় থাকলেও তা ভূমিকম্পের তীব্রতার মাত্রা অনুমান করতে পারেনি।
গুগলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “প্রতিটি ভূমিকম্প থেকে আমরা যা শিখি তার ওপর ভিত্তি করে সিস্টেমটি উন্নত করে চলেছি আমরা।”