তামাক ব্যবহারজনিত রোগ ও অকালমৃত্যু কমাতে বিদ্যমান আইন আরও কঠোর করার লক্ষ্যে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত এ অধ্যাদেশ অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবার্তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে প্যাকেটের ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সতর্কবার্তা প্রদর্শনের বিধান ছিল, সেখানে এখন থেকে ৭৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে সতর্কবার্তা মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, তামাক ব্যবহার ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ অকালমৃত্যুতে পতিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত ছিল। অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, ই-সিগারেট, ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ও হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্টের মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রডাক্টসের ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। পাশাপাশি ‘তামাকজাত দ্রব্য’-এর সংজ্ঞার আওতায় নিকোটিন পাউচ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের পাশাপাশি সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিষয়টি সরকারের নির্দেশনার ওপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনের সংজ্ঞা ও অধিক্ষেত্রও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রসার নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশ জারির লক্ষ্যে দ্রুতই লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন, এ সংশোধন কার্যকর হলে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।