আট বছর ধরে নিখোঁজ থাকা আইনজীবী মীর আহমাদ বিন কাসেম যখন স্মৃতি আঁকড়ে ধরে একটি রহস্যময় জায়গার সন্ধান দেন, তখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একদম কাছেই মিলল একটি গোপন কারাগার। দেয়াল ভেঙে সামনে আসে ইট ও কংক্রিটে তৈরি একটি জানালাবিহীন ভবন। সেখানেই ছোট ছোট অন্ধকার কক্ষ, যেগুলো ছিল নির্যাতন ও নিঃসঙ্গ কারাবাসের ঘর।

আজ (১৬ এপ্রিল) বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, এই কারাগারের অবস্থান ছিল এমন জায়গায় যেটা রাজধানীর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র কিছু দূরে। যেখানে প্লেনের অবতরণের শব্দ কাসেমের স্মৃতিতে গেঁথে ছিল। সেই শব্দই ছিল তার পথনির্দেশক। গোটা ভবনটি এখনও আছে, যদিও এর অনেক অংশ ধ্বংস করে প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।



‘আয়নাঘর’ নয়, শত শত গোপন কেন্দ্র

মীর কাসেমের ভাষ্যমতে, এটা যেন জীবন্ত কবর। বাইরের দুনিয়ার সাথে কোনো সংযোগই ছিল না।

তিনি গোটা সময়টা ছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) পরিচালিত এই গোপন কারাগারে। আগে ধারণা করা হতো তিনি ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার ‘আয়নাঘর’ নামক কোন স্থানে ছিলেন।

তদন্তকারীরা বলছেন, দেশে এমন গোপন কারাগারের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৭০০-এরও বেশি হতে পারে, যা ছিল একটি পরিকল্পিত ও কাঠামোগত নিপীড়ন ব্যবস্থা।

শেখ হাসিনার নির্দেশেই অপহরণ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এই সব গুমের ঘটনাগুলো সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট অফিসাররা স্বীকার করেছেন।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় এই গোপন বন্দীশালাগুলোর মাধ্যমে রাজনীতি, মতাদর্শ ও স্বাধীন মত প্রকাশের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘গাড়িতে উঠেই চোখ বেঁধে ফেলল’

বিএনপি ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতা আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, গাড়িতে উঠেই চোখ বেঁধে ফেলল, হাতকড়া পরিয়ে এক জায়গায় নিয়ে গেল। তারপর শুরু হলো প্রশ্ন আর মারধর।

২৩ বছর বয়সী আরেকজন ভুক্তভোগী রহমাতুল্লাহ জানান, ওই জায়গায় শোওয়ার মতো জায়গাও ছিল না। ড্রেনের ওপর ঘুমাতাম, পা ছড়িয়ে শোয়া যেত না। ওটা কোনো মানুষের থাকার জায়গা না।

অনেকে বলছেন, তাদের ওপর বৈদ্যুতিক শক, নির্যাতন, রাতভর জেরা চালানো হতো।

বিচারের আশায় অপেক্ষা

এসব গোপন কক্ষে নির্যাতন করার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১২২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

আইনজীবী কাসেম বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়তা করেছে, তারা আজও দায়িত্বে আছে। বিচার না হলে এই অত্যাচার থামবে না।

বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের পথে এগোনোর এই সুযোগে অতীতের নির্যাতনের বিচার করাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তার চাবিকাঠি হতে পারে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা জানেন, তাদের জন্য এই ভয় চিরস্থায়ী।

রহমাতুল্লাহর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় এক ভয়াবহ বাস্তবতা, ভয় এখনো যায়নি। আমি জানি, এই ভয় আমি নিয়ে মরব।





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews