ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভিয়েতনাম সফরের উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনাশ করা।
শি জিনপিং ২০২৫ সালে তার প্রথম বিদেশ সফরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং কম্বোডিয়া যাচ্ছেন। যদিও এই সফরের পরিকল্পনা অনেক আগেই করা হয়েছে, কিন্তু মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের সাথে সময়টা মিলে যাওয়ায় এই সফরের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।
পার্সটুডের তথ্য বলছে, চীন ছাড়াও বিশ্বের বহু দেশ ট্রাম্পের নয়া শুল্ক নীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় চীন নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে সোমবার ভিয়েতনামে পৌঁছে শি জিনপিং বলেছেন চীন ও ভিয়েতনামকে আমেরিকার একতরফা ভাবে গুণ্ডামির বিরোধিতা করতে হবে। তিনি বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার সমর্থনে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছেন। এই সফরের আরেকটি লক্ষ্য হলো, চীনের আঞ্চলিক বন্ধনকে শক্তিশালী করা এবং চীনা রপ্তানি পণ্যের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার সমাধান খুঁজে বের করা।
সফরের একই সময়ে ভিয়েতনাম এবং চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে শি জিনপিংয়ের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বাণিজ্য যুদ্ধ বা শুল্ক যুদ্ধে কেউই জিততে পারবে না।’
চীনা প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফরের পর ট্রাম্প বলেছেন, ঐ দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করা। তিনি বলেন, আমি চীনকে দোষ দিচ্ছি না। আমি ভিয়েতনামকে দোষ দিচ্ছি না। আমি দেখতে পাচ্ছি তারা বৈঠক করছে এবং এটা অসাধারণ। এটা একটা চমৎকার বৈঠক। এটা কীভাবে আমেরিকার সর্বনাশ করা যায় তা বের করারই চেষ্টা।
ভিয়েতনামী পণ্যের উপর আমেরিকার ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফর। অবশ্য এরিমধ্যে ভিয়েতনাম এবং অন্যান্য অনেক দেশের উপর মার্কিন শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু চীনের বিরুদ্ধে শুল্কের মাত্রা বাড়িয়ে তা বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক মৌলিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এবং ট্রাম্পের একতরফা জাতীয়তাবাদী নীতি সবার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শুল্ক সম্পর্কে একাধিক বিভ্রান্তিকর ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারকেও অস্থির করে তুলেছেন। তার শুল্ক নীতি যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডাকে ক্ষুব্ধ করেছে তেমনি চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে নতুন পথের সন্ধান করতে বাধ্য করেছে।
সব দেখে মনে হচ্ছে, শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধে পিছু হটার কোনও ইচ্ছা চীনের নেই। চীন মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, উন্নত প্রযুক্তির সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত বিরল খনিজ পদার্থের রপ্তানি সীমিত করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ সীমিত করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি বাণিজ্য জোট গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছে চীন।
সূত্র : পার্সটুডে।
বিডি-প্রতিদিন/শআ