অনেকে হয়তো নানা ধরনের সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার কথা ভাবেন, কিংবা আরামদায়ক খাবারের দিকে ঝুঁকেন। কিন্তু এইগুলো সবসময় শরীর ও মনের জন্য সঠিক সমাধান নয়, বিশেষ করে বছরের ঠান্ডা ও অন্ধকার সময়গুলোতে।
আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রায় ৭০ শতাংশই গাট বা অন্ত্রনির্ভর। একইভাবে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গাট-মস্তিষ্ক সংযোগের বড় প্রভাব রয়েছে।
এই কারণেই সবসময় এই সময়ে পেটের যত্ন নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। নিজের সুস্থতা বজায় রাখতে আমি সচেতনভাবে কিছু খাবার বেছে নেই।
ড. উমা নাইডু, হার্ভার্ড-প্রশিক্ষিত নিউট্রিশনাল সাইকায়াট্রিস্ট বলেন, শীতের বাকি সময়টা নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি ধরে রাখতে, এবং মন ভালো রাখতে আমি যেসব খাবারে ভরসা করি তা হলো—
১. সাইট্রাস ফল
লেবু, লেবুজাতীয় ফল, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা—সবই দারুণ কার্যকর। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এবং ভালো পরিমাণে আঁশ (ফাইবার)। এই সংমিশ্রণ আমাদের গাট, মস্তিষ্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে একসঙ্গে সহায়তা করে।
আমি প্রতিদিন বিকেলের সবুজ চায়ে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিই। সালাদে লেবুর রস ও খোসার কুচি যোগ করি। কখনো কখনো সালাদে কাঁটা কমলার টুকরাও যোগ করি। রোস্ট করা সবজিতে লেবুর রস দিয়ে তৈরি ভিনেগার সস মেশানো আমার প্রতিদিনের খাবারের অন্যতম অংশ।
২. শাকসবজি
শাকসবজি আমার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার অপরিহার্য অংশ। আমি প্রতিদিন একাধিকবার শাক খাওয়ার চেষ্টা করি।
আমার প্রতিদিনের সালাদে নানা রঙ ও গঠনযুক্ত উপকরণ থাকেই। শীতকালে আমি তুসকান বিন স্ট্যুতে খাওয়ার আগে কয়েকটা পালং শাকের পাতা মিশিয়ে দিই। এতে গরম তরলেই শাক নরম হয়ে যায়। এছাড়া বেবি পালং শাক ও কেল পাতা দিয়ে আমি ক্রিস্পি চিপসও বানাই, যা দারুণ বিকালের স্ন্যাকস।
এইসব শাকসবজিতে থাকে ফলেট নামক একটি বি ভিটামিন, যা মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি কমাতে পারে। আঁশও থাকে ভালো পরিমাণে, যা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে সুষম রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে।
৩. পরিচ্ছন্ন প্রোটিন
বন্য ধরা স্যামন মাছ, অর্গানিক টোফু, ঘাসে খাওয়ানো গরুর মাংস, খামারে পালন করা মুরগি ও ডিম—এসব প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে থাকে বি ভিটামিন, যা স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরের সবসময়ই আমি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাই, তবে শীতকালে আরও সচেতন থাকি, কারণ এটি মন ভালো রাখা ও শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
আমি অর্গানিক টোফুকে দাদি দেওয়া মসলা মিশিয়ে এয়ার ফ্রায়ারে ক্রিস্পি করে খাই। ঝাল ছোলা ও ডাল দিয়ে স্যুপ বা সালাদ তৈরি করি। মসলার বৈচিত্র্যে দক্ষিণ এশীয়, মেক্সিকান, গ্রিকসহ নানা স্বাদের রূপ দিই।
যারা প্রাণিজ পণ্য খান না, তাদের ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে বা খাদ্যতালিকায় নিউট্রিশনাল ইস্ট যোগ করা যেতে পারে—তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
৪. ফারমেন্টেড বা উদ্বায়ী খাবার
সয়ারক্রাউট, কিমচি, মিসো, প্লেইন দই ও কেফির—এইসব খাবারে প্রাকৃতিকভাবে উপকারী জীবাণু থাকে।
শীতকালে প্রতিদিনের খাবারে আমি এগুলো যোগ করি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ভালো রাখতে এবং স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে। সালাদে কিমচি যোগ করি কিংবা মিসো-গ্লেইজড মিষ্টি আলু তৈরি করি, যা আমার প্রথম বই “This Is Your Brain on Food”-এর প্রিয় রেসিপিগুলোর একটি।
৫. মসলা
ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমি গরম ধরণের মসলা বেশি ব্যবহার করি। হলুদ, গোলমরিচ, দারুচিনি, আদা, জাফরান ও লাল মরিচ—এসব মসলায় রয়েছে নানা ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ কমাতে পারে, যা খারাপ মেজাজ ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
আমি বিশেষভাবে উপভোগ করি গোল্ডেন মিল্ক বা হলুদ দুধ। এইসব মসলা আমি রোস্ট করা সবজি, সালাদের ড্রেসিং, চা, স্মুদি এমনকি স্বাস্থ্যকর মিষ্টান্নেও ব্যবহার করি।